আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, সন্দেহের অবকাশে ৫৪ ধারায় ইচ্ছামতো গ্রেফতার করা হতো। সেখানে আমরা ফৌজদারি কার্যবিধিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছি। তিনি বলেন, যদি সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়, তাহলে যিনি গ্রেফতার করবেন-তাকে নিশ্চিত হতে হবে যে তার সামনে অপরাধ ঘটেছে এবং তার বিশ্বাস করার কারণ আছে-ওই ব্যক্তিই অপরাধ করেছেন। সেটি সেই কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে, কেন ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করলো। নন-কগনিজেবল অপরাধের ক্ষেত্রে একই কাজ করতে হবে এবং তাকে সন্তুষ্ট হতে হবে যে কাজটি না করলে লোকটা পালিয়ে যেতে পারে। এই দুটি শর্ত পূরণ হলে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করতে পারবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত নিয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত ছিল গ্রেফতারের বিষয়ে যাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকে। গ্রেফতারের পরবর্তীকালে গ্রেফতার করা ব্যক্তির যেন অধিকার থাকে। এ নিয়ে দুটি রায় ছিল। এই রায়ের আলোকে আরও বিস্তারিতভাবে আমরা বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন, সুপ্রিম কোর্ট, সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ সবার সঙ্গে বৈঠক করে আজকে চূড়ান্ত করেছি। এর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন হচ্ছে-সংশোধনী কার্যকর হওয়ার পর থেকে যে পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেফতার করবেন, তার পরিষ্কার পরিচয় থাকতে হবে। তার ইউনিফর্মে নেমপ্লেট থাকতে হবে, আইডি কার্ড থাকতে হবে। যে ব্যক্তি গ্রেফতার হচ্ছেন-তার চাহিদামাত্র পুলিশ কর্মকর্তার আইডি কার্ড দেখাতে হবে। এটা বাধ্যতামূলক। এরপর গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে যখন থানায় নিয়ে আসা হবে, যত দ্রুত সম্ভব গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির পরিবার, বন্ধু, কিংবা আইনজীবীকে যোগাযোগ করে জানাতে হবে। এই কাজে কোনো অবস্থাতেই ১২ ঘণ্টার বেশি সময় নেওয়া যাবে না। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির শরীরে যদি কোনও আঘাতের চিহ্ন থাকে বা সেই ব্যক্তি যদি অসুস্থবোধ করেন, তাহলে অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা সুবিধা দিতে হবে। তিনি বলেন, এছাড়া প্রত্যেকটি গ্রেফতারের ক্ষেত্রে একটা মেমোরেন্ডাম অব অ্যারেস্ট রাখতে হবে, ডিটেইল তথ্য থাকতে হবে। কাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, কী অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে, কোন আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে, কে গ্রেফতার করেছে বিস্তারিত সেখানে থাকতে হবে। আগে ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বিভিন্ন এজেন্সি গ্রেফতার করতো। গ্রেফতার করে বলতো ‘আমরা জানি না’। র?্যাব গ্রেফতার করে বলতো ‘পুলিশ জানে’, পুলিশ গ্রেফতার করে অন্য আরেক সংস্থার নাম বলতো, আমরা আইনে বলেছি-যেই সংস্থাই গ্রেফতার করুক তাদের সংশ্লিষ্ট অফিসে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির সব তথ্য সেখানে থাকতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠাতে হবে। আমরা আরও বলেছি, নিয়মিতভাবে প্রত্যেক থানায়, জেলা সুপারের কার্যালয়ে, পুলিশ হেড কোয়ার্টারে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের তালিকা থাকবে। এগুলো সব বাধ্যতামূলক। আসিফ নজরুল বলেন, আমরা যে আইন করেছি সেখানে অনলাইন বেল বন্ড সাবমিশনের বিধান আছে, ডিজিটাল সমন জারি করা যাবে। এছাড়া বিচারিক তদারকি আরও শক্তিশালী করেছি। আমরা মনে করি, এই আইন যদি সঠিকভাবে প্রতিপালন করা যায়, ইচ্ছামতো মানুষকে গ্রেফতার হয়রানি, গ্রেফতার করে অস্বীকার করা, গুম করা বন্ধের ক্ষেত্রে বিরাট যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।
অবরুদ্ধ হওয়ার ঘটনা বড় করে দেখছি না: আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, মাইলস্টোন স্কুলের যারা ছাত্র, তাদের কিন্তু আমাদের প্রতি কোনও ক্ষোভ ছিল না। তিনি বলেন, প্রথমে যখন বের হওয়ার চেষ্টা করেছি, তখন স্কুলের দুজন ছাত্র আমাদের সঙ্গে গাড়িতে বসা ছিল। মাইলস্টোনের যারা ছিলেন ওখানে, আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন। আর কিছু মানুষ উত্তেজিত থাকবে, মানুষের ক্ষোভ বেশি থাকবে, এরকম একটা ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা এটা খুব বড় চোখে দেখছি না। আসিফ নজরুল বলেন, লাশের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি তো হচ্ছে। সাংবাদিকরাও আমি দেখেছি- কিছু কিছু ক্ষেত্রে যারা কনফিউশন ছড়াচ্ছে, তাদেরকে এক্সপোজ করছেন। এত শোকাবহ একটা পরিস্থিতি, সবার হৃদয় ভেঙে যাওয়া পরিস্থিতি, আমরা কেউ নিতে পারছি না এ ঘটনা। এর মধ্যে যারা না জেনে দায়িত্বহীনভাবে গুজব ছড়াচ্ছে, এর চেয়ে বড় অপরাধ আর হতে পারে না। আমরা খুব সহনশীল সরকার, আমরা সবসময় চেষ্টা করি যতটা পারা যায়, সহনশীলতা বজায় রাখতে। সবাইকে বুঝতে হবে, এখানে যদি গুজব ছড়ান, এটা কত বড় অপরাধ হচ্ছে। আপনি যদি নিশ্চিত হন তাহলে সরকারকে জানান। আমরা তো স্কুলেই তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করেছি। সেখানে নিয়মিতভাবে আপডেট দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে কিছু বলা হচ্ছে না, স্কুল কর্তৃপক্ষ কিছু বলছে না, আজকে ভিডিও ফুটেজ দেখলাম- অন্য কোন স্কুল থেকে এসে ক্লাস নাইনের মেয়ে বলছে- ক্লাস থ্রি’র মেয়ে তার ফ্রেন্ড! মানে উদ্ভট সব ঘটনা। এখন মিডিয়া শক্তিশালী আছে, স্বাধীন আছে, আপনারা গুজব সৃষ্টিকারীদের প্রতিহত করেন। তথ্যকেন্দ্র আছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আছে, যেকোনও সময় ফোন করলে তথ্য পাবেন। এটা তো নির্দিষ্ট একটা জায়গায় ঘটনা, এটা তো লঞ্চডুবি বা এমন কোনও জায়গা না, যেখানে লুকানো থাকবে। স্কুলের রেজিস্টার আছে, প্রত্যেকটা বাচ্চার বিস্তারিত তথ্য আছে। বুধবার আমরা যখন গেলাম, তখন মাইলস্টোনের শিক্ষকরা বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীদের হাতে রেজিস্টার দিয়ে বলেছেন চেক করে দেখতে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, এত বড় একটা ঘটনার পর মানুষের মনে ক্ষোভ থাকা স্বাভাবিক। আমরা অবরুদ্ধ ছিলাম, এটা নিয়ে দুঃখ ক্ষোভ হতাশা কিছুই নাই। আমরা সর্বাত্মক চেয়েছি, আমাদের বেরিয়ে আসার জন্য যেন কোনও ধরনের শক্তি প্রয়োগ না হয়।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

দুই শর্তে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা যাবে-আসিফ নজরুল
- আপলোড সময় : ২৫-০৭-২০২৫ ০৭:১২:০১ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৫-০৭-২০২৫ ০৭:১২:০১ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ